কল্যাণীর পুরুষেরা
( গল্পটি একটু ক্ল্যাসিক বাংলা উপন্যাসের ছাঁচে বর্তমান সময়ের সকল ফ্যান্টাসি এক করে লেখা। স্বাদের নতুনত্বের জন্য একজন নারীর দৃষ্টি ভঙ্গি থেকে গল্পটি লেখা কিন্তু প্রধান বক্তা তৃতীয় পুরুষ অর্থাৎ আমি। চলুন শুরু করা যাক।)
১৯১৯ সালের এক গ্রীষ্মের দুপুরে।
সূর্য প্রায় এক কোণে হেলে পরেছে। শেষ বিকেলের আলো কপোতাক্ষের পানিতে পরে চক চক করছে। নদীর ভিতর থেকে থেকে কিছু পাখি নিজেদের আপন নীরে ফিরছে। নদীর ঘাটে পানি ছল ছল করে দুই পারে ছিটকে পরছে। শান্ত নদীর এক পার ধরে খুব ধীর লয়ে একটি নৌকা এগিয়ে চলছে, নৌকার গতি দেখেই বোঝা যাচ্ছে এটি সামনেই ভিড়বে।
মাঝির যেন কোন তারা নেই। বৈঠাটি আস্তে আস্তে পানিতে দিয়ে সে যেন হালকা মেঘের মত উড়ছে।
নৌকার ভিতর ঠিক সামনে ধুতি পরা ষাট বছর বয়সী হেমন্ত মজুমদার বসে আছেন। মুখে হালকা খোঁচা দাড়ি। পরিপাটি করে আচরানো চুল গুলো সারাদিনের ব্যস্ততায় উল্টে পাল্টে আছে। পরনের খাদি কাপড়ের ফতুয়াটিও ঘামে ভিজে একাকার। এই গ্রীষ্মের গরমে কোন উন্মাদ বিয়ে করতে যায় তাও আবার বিশ ক্রোশ দূরের গায়ে। নিজ মনে খুব বিরক্ত হয়েই ভাবছেন তিনি।
নৌকার ছই এর মধ্যে চুপচাপ কিছুক্ষণ নিজের মামাকে দেখে মাথা নিচু করে ফেলে অসীম। তার তেমন কিছু বলার নেই এখন। সেও ক্লান্ত কিন্তু তার প্রেমের মানুষকে বিয়ে করতে পেরেছে ভেবে সে কিছুটা হলেও খুশি। শান্ত নদীর পানির শব্দ তাকে অসম্ভব শান্তি দিচ্ছে। সে ঘুরে কল্যাণীর দিকে টাকায়।
কল্যাণী, বয়স ১৯। অসীমের সদ্য বিবাহিতা স্ত্রী। পুরো নাম কল্যাণী দেবনাথ। তার গ্রাম অসীমের গ্রামের থেকে অনেক দূরে। বাবা একটি ডাকের আপিসে ছোট মাইনের চাকরি করেন। মা মারা গেছে ছোট থাকতেই। অসীমের সাথে কল্যাণীর দেখা হয়েছিল সেই ভুত চতুরদরশির মেলাতে। মুড়কির দোকানে যখন কল্যাণী হামলে পরছিল তার প্রিয় মিষ্টান্ন কিনতে, তখনি অসীমের চোখের দুয়ারে সে আঁটকে যায়। প্রথম দর্শনেই প্রেম।
অসীম প্রথম কল্যাণীকে দেখেই তার চোখের মাঝে আটকে গেছিলো সে। অসীমের মনে হচ্ছিল তার জীবনের সকল চাহিদা বাদ, শুধু এই মেয়েটিকেই সে পাশে চায়।
প্রেম তাদের মধ্যে হয়ে যায়। অসীম ও দেখতে বেশ। লম্বা, স্বাস্থ্য বান এবং সুগঠনের অধিকারী। অসীম কল্যাণীকে বিয়ে করে নিজের ঘরে নিতেই প্রস্তুত। কিন্তু বাধা অন্যত্র।
অসীম হেমেন্দ্রপুরের জমিদার দীপক নারায়ণ চক্রবর্তীর বড় ছেলে। রাগী, নিজের অধিষ্ঠান নিয়ে সচেতন দীপক নারায়ণ শুরু থেকেই এই বিয়ের বিরোধী। জমিদারের ছেলে বিয়ে করবে এক ডাক আপিসের লোকের মেয়েকে? ছি।
কিন্তু অসীমের অসম্ভব জেদ এবং রাগের সামনে হার মানতেই হল তার। কিন্তু নিজের মর্যাদা সে ছাড়বে না, তাই সে যায়নি বিয়েতে। তার স্ত্রীর ভাইকে পাঠিয়েছে।
এসবই কল্যাণী জানে। কিন্তু সে কি করবে আসলে তা জানেনা। জমিদারের বাড়ীর বউ হয়েছে সে এটা শুনে পাড়া প্রতিবেশীর হিংসা দেখে তার বেশ লাগছিলো। এবং নিজের কাছেই নিজেকে একটু বেশ বড়ই মনে হচ্ছিল। শত হোক দীপক জমিদারের ঘরের প্রথম বউ সে। আহ।
কল্যাণীর বর্ণনা জানা পাঠকদের বেশ দরকার। যাতে তারা পরবর্তীতে সকল ঘটনা সমূহকে নিজের মনে আঁকতে পারেন।
কল্যাণীর উচ্চতা ৫ ফিট ৪। শুকনো না আবার মোটাও না সে। মানে মোটামুটি স্বাস্থ্য আছে তার। বাবা তিন বেলা তার উদরপূর্তি করতে যা যা লাগে করতো। শত হোক এক মাত্র মেয়ে। গায়ের রং উজ্জ্বল শ্যমলা। চোখ টানা টানা, একটু চোখা নাক। ঠোটের পাপড়ি হালকা মোটা। মায়ের থেকে এটি পেয়েছে সে শুনেছে। তার হাতের নখ গুলো একটু লম্বাটে। নখ না ছাটলে সাদা হয়ে নখ বেড়ে ওঠে। পায়ের নখ গুলো তেমনি। পায়ের আঙ্গুল গুলো সুন্দর, হালকা হালকা শিরা জেগে থাকে সব সময়। ঘারে একটা তিল আছে যেটা লক্ষ্যনীয়। চুল তার সোজা এবং পিঠের মাঝ পর্যন্ত।
লাল নতুন শাড়ি, কপালে সিঁদুর। গলায় মঙ্গলসূত্র, দুই হাতে শাখা এবং দুটো করে সোনার চুরি, অসীম দিয়েছে। কপালে সিঁদুর এবং পায়ে আলতা। এক পায়ে একটি রুপোর নূপুর। যদি তার নূপুর পছন্দ না, কিন্তু অসীম কিনে দিয়েছে বলে পরে আছে।
নৌকা যখন জমিদার বাড়ির খালে তখন শেষ বিকেল। খালের ঝোপ ঝাড় পার হয়ে যখন নৌকা জমিদার বারির সীমানাতে ঢুকল, কল্যাণীর সামনে জমিদার বাড়ী ফুটে উঠলো। হা হয়ে গেল সে।
বিশাল বড় এক অট্টালিকা যেন। এত বড় বাড়ির কথা সে শুধু শুনেছে। বিশাল প্রশস্ত বাড়ী, দুইটি তালা। সামনে বড় গাছে ঘেরা রাস্তা, তার শেষ মাথায় দরজা। বড় কাঠের বিশাল দরজা। সামনে দুটো সিংহের মূর্তি।
কিন্তু কল্যাণী বেশ একটু অবাক হল এই দেখে যে বাড়ির সামনে শুধু একজন ছোট খাটো চাকর শ্রেণীর কেউ দাঁড়িয়ে আছে। আর কেউ নেই সাথে। জন মানব শূন্য পুরো।
কল্যাণী ঠিক বুঝতে পারছে না যে সে কি এটাকে খুব সহজ ভাবে নিবে নাকি অন্য কোণ অর্থ বের করবে। স্বভাবে অতি সহজ সরল কল্যাণীর আপাতত এটুক ই চিন্তে।
নৌকা ঘাটে ভিড়তেই দৌড়ে এলো চাকর শিবু। শুকনো, বেঁটে , চুল কম। নৌকা থেকে হেমন্ত বাবু নেমে একটু আড়মোড়া ভেঙ্গে নেয়।
অসীম আস্তে এসে সামনে দাঁড়ায়। এরপর কল্যাণী উঠে আসে। তার চুরি শাখা নূপুরের এক ঝন ঝন শব্দ শোনা যায়।
অসীম নেমে এসে কল্যাণীকে হাতে ধরে খুব আস্তে সাবধানে নামায়। কল্যাণী নেমেই নিজের ঘোমটা টেনে নেয়।
হেমন্ত বাবু বলে ওঠে,
– চল বাপু। আর পারছিনে। সারাদিন এমন ভাবে কাটলে রাতে আর বাসর করতে হবেনা।
শুনে লজ্জা পেয়ে যায় অসীম এবং কল্যাণী দুজন ই।
হেটে বাড়ীর দিকে আগায়।
বাড়ির দরজাটি শিবু দৌড়ে আগে গিয়ে খোলে। বিশাল এক রুমের ভিতর প্রবেশ করে তারা। কল্যাণী তার ঘোমটার ফাঁকা দিয়ে হা করে দেখছে সে বাড়ী। বলতে গেলে সৌখিন জমিদার বাড়ীর মতই। বড় বড় জানালা, দরজা। একটা বড় ঝুমকো উপরে, নিচে লম্বা দামী কাঠের সোফা। মেঝেতে কিছু একটার চামড়া।
দেয়াল ভরা নারায়ণ বংশের সকল পিতামহ এবং প্র পিতামহের ছবি টানানো। দেয়ালে একটি বড় বন্দুক।
এসব কল্যাণী হা করে দেখছিল কিন্তু হঠাত তার মনে হল এত বড় দালান, কোণ মানুষ নেই কেন! হেমন্ত বাবু নিজের ধুতি ঝেড়ে বলল,
– দাদা ঠাকুর কই রে শিবু?
– বারান্দাতেই ছিল বাবু। আমাকে বললে বউমাকে নিয়ে আসতে।
– তা ডাক রে হতচ্ছাড়া দাদাঠাকুর কে। এত ক্ষণ নৌকাতে চরে পিঠ ধরে গেল রে সবার। আর বৌমারও তো বিশ্রাম দরকার।
কল্যাণী এই প্রথম নিচু স্বরে অসীমের কাছে গিয়ে বললও,
– মা আসবে না?
– না।
– কেন?
– বলছি দারাও।
আসলে অসীমের মনে ব্যাপক ভয়। তার বাবা দীপক জমিদারের ঘটনা সবই সে জানে। লোহা গলে যাবে এমন কঠোর ব্যাক্তি সে। কি ব্যবহার আসলে সে করবে এখন তা ঠাওর করতে পারছে না অসীম।
কয়েক মুহূর্তের মধ্যে সিড়ি থেকে খট খট করে খড়মের শব্দ নিয়ে নেমে এলেন দীপক নারায়ণ। ভারী শরীর। বয়স ৫৭ হচ্ছে এবার। পাকা ঘন চুল। খুব সুন্দর করে দাড়ি কামানো। চোখ দুটো হালকা নীলাভ। হাতের লাঠি নিয়ে সিড়ি থেকে নেমে এসে দাঁড়ালেন। পরনের দামী পাঞ্জাবী টা কে হাত দিয়ে সোজা করতে করতে বললেন,
– নারায়ণ বংশের নতুন গৃহ বধূকে দাড় করিয়ে রেখেছ তোমরা!
হেমন্ত বাবু উত্তর দিলেন,
– না না দাদা ঠাকুর বৌমা তো আপনার চরণ ধূলি নিতেই দাঁড়িয়ে আছে।
অসীম বলল,
– বাবা। আশীর্বাদ করবে না?
– দূর থেকে আশীর্বাদ কিভাবে করে বলে দাও।
শুনে অসীমের ম্লান মুখে হাসি ফুটল। কল্যাণীর হাত ধরে ছুটে গেল সে। দীপকের পায়ে ঝুঁকে প্রণাম করলো দুইজন।
– বেচে থাকো তোমরা। সুখি হও। বিয়ের আগে তো বউ মা কে দেখিনি। এবার দেখতে পারি কি?
অসীম হেসে কল্যাণীকে একটা খোঁচা দিল। লজ্জায় কল্যাণী প্রায় শেষ। সে আস্তে আস্তে নিজের ঘোমটা নামালো।
দীপক নারায়ণের চেহারা এবার ভাল মত দেখল সে। দীপক নারায়ণ কিছুক্ষণ খুব তীক্ষ্ণ চোখে দেখল কল্যাণীকে। এরপর ধীর গলায় বলল,
– তোর মায়ের কাছে নিয়ে প্রণাম করিয়ে আন।
– হ্যা হ্যা বাবা।
বলে কল্যাণীকে নিয়ে এগিয়ে গেল অসীম।
সিড়ি বেয়ে উপড়ে উঠলো তারা। দুই তলার সামনে একটি লম্বা বারান্দা। তার সাথে লাগোয়া চারটে রুম।
অসীম উঠে কল্যাণীর হাত ধরে বলল,
– মা তিন বছর আগে পক্ষাঘাতে পরে অসুস্থ হয়। এরপর থেকে সে কথা বলতে পারেনা কিছু করতে পারেনা। তিন বেলা শিবু খাইয়ে দেয় এবং মল পরিষ্কার করে। বাড়ীতে আমি, বাবা, শিবুই আছি। হেমন্ত মামা মাঝে মাঝে আসে। আমার ছোট ভাই অম্লান শহরে পরছে। এই বাড়ি বহু বছর ধরে নারী শূন্য। তুমি ই আবার এই বাড়ীকে প্রানজ্জল করে তুলবে।
কল্যাণী এসব শুনে একটা সুন্দর হাসি দেয়। তার মনে হয় হ্যা, সে তার স্বামীর সেবায় নিজেকে বিলিয়ে দিবে। এবং তার শ্বশুর দেবর সবার চোখের মনি হয়ে উঠবেই সে।
বড় রুম টার মাঝখানের বিছানাতে শুয়ে থাকা রমনা দেবীর পা ছুঁয়ে প্রণাম করবার সময় তিনি শুধু তাকিয়েই ছিলেন কল্যাণীর দিকে। চোখের কোণে তার জমে ছিল জ্বল। কেমন একটা গুমোট রুমটা। কল্যাণী দেখে রুমের জানালা বন্ধ এবং তাতে ঝুল পরে আছে। বিছানার পাশে একটি টেবিল তাতে কিছু নোংরা কাপড়। একটা কেমন পচা গন্ধ আসছে রমনা দেবীর শরীর থেকে। অসীম তার মায়ের হাত ধরে কল্যাণীকে পরিচয় করিয়ে দিলো। কিন্তু কল্যাণীর খুবই খারাপ লাগছিল। এমন খারাপ ভাবেও মানুষ বেচে থাকে!
সন্ধ্যা পড়তেই ধীরে ধীরে জমিদার বাড়ীর সব গুলো মোম, হারিকেন, দিয়া জ্বলে ওঠে। শিবু একাই করে বলা চলে। আলো জ্বলবার পর সেই জমিদার বাড়ীকে আরও ভুতুড়ে লাগে কল্যাণীর।
অসীম সেই মৃদু নরম আলোতে কল্যাণীকে পুরো বাড়ি ঘুরিয়ে দেখায়।
নিচ তালায় একটি বড় অন্দরমহল। যেখানে তার প্রথম প্রবেশ করেছিলো। তার সাথে লাগোয়া সিড়ি। নিচে একটি বড় মাটির চুলা সহ রান্না ঘর। তার পাশেই দরজা যার বাহিরে গোয়াল এবং ঘন বাগান।
অপর পাশে একটি ছোট রুম যার ভিতর বড় টেবিল এবং দীপক নারায়ণের লাইব্রেরি। উপর তলাতে চারটি রুম। প্রথম টি অসীমের। তার পরের টা ছিল অম্লানের। তালা মারা সেটি এখন। এরপরের টি কোন অতিথি এলে। এবং তার পরের রুম টিতে আছেন রমনা দেবী।
মূল বাড়ির দোতলাতে হেটে ছাদ পাড় হলে একটা বড় রুম। যেটি দীপক নারায়ণের। রুমের সাথে দেয়াল করা বড় বাথরুম। সিঁড়ি বেয়ে নামলে বিরাট শান বাধানো পুকুর ঘাট।
বারান্দা তে একটি বড় হুক্কা এবং আরাম কেদারা। দীপক নারায়ণের।
সেদিন সারা বাড়ী ঘুরে ঘুরে কল্যাণীর মনে হচ্ছিল এটি ই তার বাড়ি। নিজের সব টুকু দিয়ে এই শূন্য বাড়ি সে ভরিয়ে তুলবে।
দীপক নারায়ণ সেদিন কেন জানি রুমেই ছিলেন। মূল বাড়ীর বাহিরে রান্নাঘরের সাথের ছোট রুমে শিবু থাকে। হেমন্ত বাবু রাতে কিছু টাকা কল্যাণীর হাতে গুঁজে বিদায় নিলেন গরুর গাড়িতে নিজের বাড়ির উদ্দ্যেশে।
রাতে রুমে সারাদিনের ভারী সাজ গজ খুলে একটু হালকা হয় কল্যাণী। হালকা লাল পাড়ের শাড়ি টি পরে নেয়। পুরো জমিদার বাড়ি রাতের আধারে কেমন যেন ঘুমিয়ে আছে। বিকালের পর আর দীপক নারায়ণকে দেখেনি কল্যাণী। কেমন একটু অদ্ভুত ও লাগে তার। নতুন বউ হিসেবে যা যা পাওয়ার কিছুই সে পায়নি। তবু সে খুশি। এত বড় ঘর, এত আরাম আয়েশ। সে আসলে ভাগ্যবান ই।
অসীম রুমে এসে তার পাঞ্জাবী টা খুলে বসে। ঘেমে আছে সে। কল্যাণী পাখা নিয়ে তাকে বাতাস করতে থাকে। দিয়ার আলোতে দুইজন চক চক করছে। অসীম বলে,
– আমাদের বাড়ীতে বহুদিন পর কোন নারীর আগমন ঘটলো। তুমি। আমাদের লক্ষ্মী।
– যাও। এভাবে বল লজ্জা পাইনা আমি!
– সত্যি ই বলছি। বাবা একটু রাগী এবং কঠোর কিন্তু এর মানে এই না সে তোমাকে ভালবাসবে না। যখন বাসবে পুরোটা দিয়ে বাসবে।
– জানি।
অসীম কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে কল্যাণীর দিকে। এরপর তার মাথায় জরানো ঘোমটা আস্তে সরিয়ে দেয়। শ্বাস ভার হয়ে আসে কল্যাণীর।
সেই রাতে প্রথম কল্যাণী কোন পুরুষ দেহের ছোঁয়া পায়। ১৯ বছরে এই প্রথম। তার নগ্ন শরীরে কোন পুরুষ হাত চলাচল করে। সেই রাতেই কল্যাণী আর সতী থাকেনা। তার শরীরের সেই লাল রক্ত টুক বিছানাতে পরে সেই সাক্ষ্মী ই দেয়।
এই ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা আমি দিচ্ছিনা কারণ আমার এই গল্প অসীমকে নিয়ে নয়। কল্যাণী তখনো জানতো না, তার সেই নতুন শরীর কিভাবে বিলীন হয়ে যাবে এক অবিশ্বাস্য ভাবে। সহজ সরল গ্রামের এই মেয়েটির যৌবন কিভাবে হারিয়ে যাবে কালো এক জগতে।
পরদিন সকালে খুব তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে ওঠে কল্যাণী। তল পেটে হালকা ব্যাথা আছে বটে কিন্তু সেটা বেশিনা। সকাল সকাল পুকুর ঘাটে স্নান সেরে কপালে সিঁদুর এবং একটি টিপ দিয়ে নেয় সে। বাবার দেয়া নতুন লাল শাড়িটি পরে সে রান্না ঘরে চলে যায়।
শিবু রান্না ঘরেই ছিল। কল্যাণীকে দেখে উঠে দাঁড়ায়।
– বউমনি?
– আমি আজ রাঁধবো শিবু কাকা।
– কাকা না বলে বউ মনি। আমি সামান্য চাকর।
– তো! এসব আমাকে বলবেন না। আপনি আমার কাকা ভাই। এখন শিগগীর আমাকে সবজি কেটে দিন রান্না চড়িয়ে দেই। বাবা অসীম সবাই উঠে যাবেন।
চারপাশে পাখির কোলাহল। দু একটা গরু থেকে থেকে ডাকছে। সেগুলো খুব সুন্দর একটা আবহ দিচ্ছে কল্যাণী কে। মাথায় ঘোমটা পেঁচিয়ে, সে রান্না করছে, কুমড়ো, ডাল বড়া আর রুটি। সে এই বিষয়ে পাক্কা দক্ষ। ছোট থেকে রাঁধতে রাঁধতেই সে এখন এত দক্ষ।
অসীম ওঠে ৯ টা নাগাদ। উঠে দেখে পুরো টেবিল সাজিয়ে রেখেছে খাবারে কল্যাণী। দেখে সে কল্যাণীকে জড়িয়ে চুমু খায় কপালে আর বলে,
– বহু বছর পর সকালে এমন সুন্দর খাবার। তুমি এক কাজ করো বাবা কে ডেকে আনো খুশি হবে।
– আমি? না না।
– যাও বলছি। যাও যাও।
অনেক টা ধাক্কা দিয়ে পাঠায় কল্যাণীকে সে।
নূপুরের ঝুম ঝুম শব্দ সাথে করে হেটে চলে কল্যাণী। দীপক নারায়ণের রুমের সামনে এসে ধীর লয়ে ডাকে সে,
– বাবা। বাবা। বাবা।
– কে?
– বাবা আমি। খাবার তৈরি আছে নিচে।
কিছুক্ষণ কোন শব্দ আসে না। এরপর খুব গম্ভীর ভাবে উত্তর আসে।
– যাও আসছি।
দরজা না খুলেই উত্তর দেয় দীপক নারায়ণ। কল্যাণী আর কিছু বলে না। খুব গুরু গম্ভীর লোক দীপক। কল্যাণীর এখনি একটু ভয় ভয় লাগছে তাকে।
খাবার টেবিলে বসে কল্যাণী অসীম কে দেখছে। গোগ্রাসে খাচ্ছে সে।
অসীম খেতে খেতেই বলে,
– কল্যাণী, আমি দারুণ বললেও কম হবে। উফফফ।
কল্যাণীর বেশ ভাল লাগে। এটুকু কেই তার জীবন মনে হয়।
এমন সময় খড়মের শব্দ পুরো মহলে ছড়িয়ে পরে। উঠে দাঁড়িয়ে পরে কল্যাণী। অসীম খাবারের গতি কমিয়ে সোজা হয়ে বসে।
সাদা ধুতি এবং ফতুয়া গায়ে বের হয়ে আসে দীপক নারায়ণ। ধীরে ধীরে এসে মধ্য টেবিলে বড় চেয়ার টেনে বসেন এবং বলে ওঠেন,
– শিবু! এই শিবু!
কল্যাণী ধীরে স্বরে বলে,
– বাবা, শিবু কাকা রান্নাঘরে কি লাগবে বলুন।
একটু নরম হয় সে। বলে,
– আমার হুক্কা টা দেয়নি হারাম জাদা।
– বাবা আমি এনে দিচ্ছি।
কল্যাণী ঘুরে রওনা করতেই শিবু দৌড়ে আসে হুক্কা হাতে।
– দাদা ঠাকুর মাফ করি দেন। কয়লা শেষ হয়ে গেছিলো। ওটা গরম করতেই দেরী।
আর কিছু বলে না দীপক নারায়ণ। কল্যাণী তার থালায় সবজি আর রুটি বেঁড়ে দেয়। আস্তে আস্তে খেতে শুরু করে দীপক নারায়ণ। এরপর বলেন,
– তোমার…… রান্না ভালো বউমা।
কল্যাণী একটু যেন দম ফেলে বাচলো। সে অসীম আর দীপক কে খাবার দিয়ে দিতে লাগলো দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়েই।
অসীম কে খাবার দিয়ে দীপকের দিকে ঘুরতেই একটু যেন থমকে গেল কল্যাণী। একটা অদ্ভুত জিনিস তার চোখে ধরা পরেছে।
দীপক নারায়ণ মুখে একটু রুটি চিবোতে চিবোতে একটু খুব অদ্ভুত নজরে নিচে তাকিয়ে কিছু একটা দেখছেন। কল্যাণী একটু লক্ষ্য করতেই বুঝতে পারলো দীপক নারায়ণ তার পায়ের দিকে তাকিয়ে আছে। কাজ করবার সময় শাড়ীটা হালকা তুলে নিয়েছিল সে। তার তার দু পায়ের পাতা বের হয়ে আছে। আলতা পরা নূপুর দেয়া সেই পায়ের দিকে তাকিয়ে আছে দীপক নারায়ণ।
কি দেখছে সে! কল্যাণী ভাবে। তার পায়ের দিকে তার শ্বশুর এভাবে তাকিয়ে আছে কেন! তার পা তো খুব সাধারণ। কোন কি দাগ লেগে আছে! না তো।
আলতা দেয়া তাই কি তাকিয়ে আছেন তিনি? কল্যাণী বুঝতে পারছে না।
দীপক নারায়ণ খুব মনোযোগ দিয়ে কল্যাণীর পায়ের দিকে তাকিয়েই আছেন। পায়ের আঙ্গুল, নখ সব যেন তিনি খুঁটিয়ে দেখছেন।
কল্যাণী একটু অন্যদিকে মনোযোগ দিয়ে আবার তাকায়। না এবার আর তিনি দেখছেন না। চুপ চাপ মাথা নিচু করে কিছু একটা ভাবতে ভাবতে খাচ্ছেন। কল্যাণী আস্তে করে নিজের ডান পায়ের দিকে তাকায়।
কই কিছুই তো নেই তেমন। খুব স্বাভাবিক আলতা দেয়া পা তার!
সেদিন সারাদিন বেশ আনন্দে কাটে কল্যাণীর। বাগানে ঘুরে, দোলনায় দোল খেয়ে সে আর অসীম গ্রাম ঘুরতে বের হয়। গ্রামের মানুষ জন তাদের দেখে ছুটে আসে। নতুন বউ জমিদার বাড়ির। ভালোই লাগে কল্যাণীর।
সেদিন সন্ধ্যায় ঘরে ঢুকে কল্যাণী দেখে দীপক বসে আছেন সোফায় হুক্কা হাতে। সামনে নায়েব এবং কয়েকজন লোক দাঁড়িয়ে। জমি, খাজনা এসব নিয়ে কি যেন আলাপ করছে। অসীম আর কল্যাণীকে দেখেই দীপক বলেন,
– অসীম। তোমার সাথে কথা আছে। আমার রুমে এসো কিছুক্ষণ পর।
অসীম মাথা নেড়ে এগোয়।
নিজ রুমের পালঙ্কের উপর হেলান দিয়ে বসে আছে কল্যাণী। হাতে একটি পেয়ারা। অসীম পেরে দিয়েছে। পেয়ারা টি খেতে খেতেই সে চিন্তা করছে, কি বলবে অসীম কে বাবা? কোন ঝামেলা? কল্যাণী তো তার সব টুক দিয়ে দিচ্ছে। তাহলে?
এই সেই ভেবে ভেবে সে পেয়ারা শেষ করে ফেলে। অসীম আসেনা। রুম ময় পায়চারী করে সে। অস্থির লাগছে। দীপক নারায়ণ কে বেশ ভয় ই পাচ্ছে সে।
কিছুক্ষণ পর দীপক রুমে প্রবেশ করে।
তার মুখ গম্ভীর। রুমে ঢুকেই খাটে বসে পরে দীপক। কল্যাণী পাশে বসে তার হাত ধরে।
– কি হয়েছে গো?
– বাবা আমাকে শহরে পাঠাচ্ছেন ২ মাসের জন্য।
– ওমা কেন?
– শহরে বাবার কাচারি বাড়ীতে ঝামেলা চলছে। আমাকে সামলাতে হবে। অম্লান আসতে পারবেনা। বাবা এই অঞ্চল সামলাচ্ছে। অন্যত্র যাওয়া টা তার জন্য কঠিন।
– যেতেই হবে?
– হ্যা।
দু ফোটা জল গড়িয়ে পরে কল্যাণীর গাল বেয়ে। তার মন টা যেন ভেঙ্গে খন্ড খন্ড হয়ে গিয়েছে। দুই মাস অসীম কে ছাড়া। মাত্র দুদিন ই কাঁটালো সে।
অসীম কল্যাণীর চোখের জল হাত দিয়ে মুছে দেয়, এরপর জড়িয়ে ধরে বলে,
– আরে গাধী। পরের সপ্তা তে যাবো। এক সপ্তা আছি তো। এখন চোখের জল তুলে রাখো।
চোখের জল নিয়েই হেসে ওঠে কল্যাণী।
হলুদাভ নরম আলোতে একটি শিল্পীর আঁকা চিত্রের মত লাগে তাদের।
হেথায়ঃ
( এই গল্পে যখনি হেথায় থাকবে তখনি আমরা কল্যাণীর থেকে কিছুক্ষণের জন্য চলে যাবো অন্য চরিত্রে তাদের জানতে। )
রুমের ভিতর বিরাট পালঙ্কের মাঝখানে শুয়ে আছেন দীপক নারায়ণ। দুই পাশের শিবুর জ্বেলে রাখা বড় কাঁচের হারিকেন জ্বলছে। জানালা খোলা, সেখান থেকে হালকা দখিনা বাতাস ঢুকছে। তাতে সাদা পর্দা দুলে উঠছে।
খালি গায়ের জাগায় জাগায় ঘাম আটকে আছে দীপক নারায়ণের। বয়স হলেও এক সময় ব্যায়াম করা কুস্তিগিরের শরীর এখনো বিদ্যমান।
তার ধুতিটি এক পাশে পরে আছে। নগ্ন শুয়ে আছেন তিনি। নিজের পুরুষাঙ্গ বা ধন হাতে নিয়ে আস্তে আস্তে ডলছেন। চোখ বন্ধ করা তার। ধন টি বলতে গেলে এখনো বেশ শক্ত এবং বড় তার। হালকা একটা চপ চপ শব্দ হচ্ছে প্রতি ওঠা নামাতে।
চোখ বন্ধ করে দীপক নারায়ণ ভাবছেন।
তার মনে ভাসছে কল্যাণীর ছবি। কল্যাণীকে প্রথম দিন দেখেই নিজের ধুতির নিচে একটু শক্ত অনুভব করেছিলেন দীপক। কল্যাণীর সরু চোখ, মোটা পাপড়ি, লম্বা সুশ্রী হাতের নখ তার নিম্নাংশে পুরো ঠাণ্ডা হাওয়া বইয়ে দিয়েছিল। কল্যাণী বেশ রেখে ঢেকে চলে তাই কিছু দেখতে পান নি। আজ সকালে কল্যাণী টেবিলে দাঁড়িয়ে খাবার দেবার সময় কল্যাণীর পাছাটিকে একটু দেখবার চেষ্টা করেছিলেন। শাড়ির উপর দেখে বোঝা যায়নি। বড় হবার কথা না বেশি। সদ্য ই তো সে সতী হারালো।
সকালে কল্যাণী টেবিলে কাজ করতে করতে নিজের অজান্তে একটু কপালের ঘাম মুছেছিলো। শাড়ির ফাঁকা দিয়ে সাদা ব্লাউজে ঢাকা তার বগল টিকে দেখেন দীপক নারায়ণ। একটু ঘেমে গোল হয়ে ছিল।
– আহহহ
একটু হালকা আওয়াজ করে ওঠেন তিনি। পাছা টা কেমন হবে? ফর্সা? না বেশি ফর্সা হবেনা। কিন্তু খুব গোল আর শক্ত হবে। আর বুক? কল্যাণীর বক্ষযুগল বা দুধ মাঝারী গড়নের। খুব বেশি বড় না কিন্তু আবার ছোট ও না। শাড়ির উপর দিয়ে কিছুটা আকার হালকা বোঝা গেলেও তা যথেষ্ট নয়। দীপক নারায়ণ অনেক চেষ্টা করেছেন। দুধের আকার হিসেবে বড় আছে মোটামুটি সেটা সে বুঝে গেছেন। কিন্তু দেখতে কেমন হবে? ধরতে? শেষ দুধ ধরেছিলেন শহরের পল্লীতে। কিন্তু সেই শত মানুষের ভোগ করা নারী আর সদ্য ফোটা ফুলের পাপড়ি।
কল্যাণীর পা দুটো কে বেশ ভাল ভাবেই দেখেছেন দীপক নারায়ণ। নরম পা দুটো যখন নড়ছিল দীপক ভাবছিলেন ওই বুড়ো আঙ্গুলটিকে মুখে নিয়ে নাড়লে কেমন লাগবে? কল্যাণীর বুড়ো আঙ্গুলে অল্প হালকা নখ আছে। সেটা জিহ্বাতে কি বাজবে? না বেশি বাজার কথা না। পায়ের তলা টা বেশ লাগার কথা জিহ্বা দিয়ে চাটতে। ছোট আঙ্গুল গুলোকে মুখে নিয়ে আস্তে আস্তে চুষতে হবে তাহলেই স্বাদ টা পাওয়া যাবে। সবার শেষে চাটতে হবে পায়ের গোড়ালি।
এবং তখন যদি তার দুধ গুলো বের হয়ে থাকে উফফফফফফফফফফফফ।
গল গল করে থক থকে এক গাদা বীর্য বের হয়ে ছিটকে পরে বিছানাতে। কেঁপে ওঠেন দীপক নারায়ণ। অনেক দিন পর এত শান্তি। আহ। আহ। এত সূখ কোন নারীকে চিন্তা করে তিনি পাননি।
শেষ করে কিছুক্ষণ শুয়েই থাকেন তিনি। এরপর উঠে নগ্ন অবস্থাতে দরজা খুলে দেন। শিবু বাইরেই বসে ছিল। ঘরে ঢুকে বীর্য মাখা চাদর টা নিয়ে নতুন চাদর বিছিয়ে দিতে থাকে। নগ্ন ভাবেই আরাম কেদারা তে বসে হুক্কা টানতে থাকেন দীপক নারায়ণ। তার মনে একটি লক্ষ্য ভোগ, ভোগ, কল্যাণীকে ভোগ।
চলবে